পিরোজপুর প্রতিবেদক ॥ ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলেই এর প্রভাবে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলায় কঁচা নদীর ভাঙনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় নদী তীরবর্তী তেলিখালী ইউপির গ্রামগুলোর। নদী ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপজেলার তেলিখালী ইউপির হরিণপালা, তেলীখালী ও জুনিয়া গ্রামের।
প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙন কবলিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন গ্রামগুলোর নদী তীরবর্তী জনসাধারণ। বসতভিটা ও কৃষি জমি কঁচা নদীর ভাঙনে বিলীন হওয়ায় ওই এলাকার মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন। মধ্যবিত্ত থেকে দরিদ্র, বাপ দাদার ঠিকানা ও শেষ সম্বল খোয়ানোর অজানা শঙ্কা এলাকাবাসীর কণ্ঠে।
দ্রুত বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বর্ষা মৌসুমে কঁচা ও পোনা নদীর প্রবল ভাঙনে নদীগর্ভে বিলিন হতে পারে উপজেলার হরিণপালা, তেলীখালী ও জুনিয়া, চরখালীসহ বিভিন্ন গ্রাম। জোয়ারে পানির চাপে নদী পাড়ের গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে মৎস্য খামারসহ কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে কঁচা নদীর ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে ওই এলাকার অনেক পরিবার সড়কের পাশে অস্থায়ী তাবু ও টিনের ছাপড়া ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। নদীপাড়ে এই এলাকার জনসাধারণ কৃষিকাজ ও নদী ও সাগরে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতিবছর নদী ভাঙনের ক্ষয়ক্ষতিতে সহায় সম্বল হারিয়ে নদী পাড়ের এলাকার হাজার হাজার পরিবার অসহায় হয়ে পড়ে।
এছাড়া বলেশ্বর নদীর অব্যাহত ভাঙনের কবলে মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া, খেতাচিড়া, কচুবাড়িয়া, ভোলমারা এবং ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া, চারাখালী, কালাইয়া এবং খোলপটুয়াসহ বিভিন্ন গ্রাম। প্রতিদিনই জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে গ্রামগুলো। এতে ভিটেমাটি ও ফসলি জমি হারিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে নদীপাড়ের মানুষের। বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙনের শঙ্কার মাত্রা আরো বা
তাই এলাকাবাসীর দাবি বর্ষা মৌসুমের আগে কঁচা, পোনা ও বলেশ্বর নদীর পাড়ের বেড়িবাঁধ নির্মাণের। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হয় তাহলে ভান্ডারিয়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে নদী তীরবর্তী এসব গ্রাম। কঁচা নদী ভাঙনরোধে তেলিখালী গ্রামে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য অধিগ্রহণ করা প্রায় আধা কিলোমিটার নদী পাড়ের জমি এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। নদী শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অনুরোধ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে তেলীখালী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামসুদ্দিন হাওলাদার বলেন, আম্ফানের প্রভাবে নদী ভাঙন কবলিত বাড়িঘরহারা এলাকার মানুষের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে তাবু ও টিন বিতরণ করছি। তা দিয়ে তারা সড়কের পাশে ছাপড়া ঘর ও তাবু খাটিয়ে বসবাস করছে। এছাড়া ইউপির পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগে সঠিকভাবে নদী শাসন করে এসব এলাকায় যদি বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হয় তাহলে কঁচা নদীর ভাঙনে নদীপাড়ের হাজার হাজার পরিবার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানাই দ্রুত সময়ের মধ্য নদী শাসন করে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হোক। পিরোজপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন মহারাজ জানান, এখনো বেড়িবাঁধের কোনো কাজ শুরু হয়নি। বেড়িবাঁধের সঙ্গে নদী শাসন করা না হলে, শুধুমাত্র মাটির তৈরি বেড়িবাঁধ কোনো কাজেই আসবে না। তাই বেড়িবাঁধ নির্মাণের পাশাপাশি নদী শাসন করতে হবে।
পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, জেলায় মোট বেড়িবাঁধের পরিমাণ ২৯৩.১ কিলোমিটার। যার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পরিমাণ ২০.০৯ কিলোমিটার। যা জিও ব্যাগের মাধ্যমে ঠিক করতে ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা প্রয়োজন। দুর্যোগ কালীন সময়ে কোনো আর্থিক সহায়তা পাই না। উক্ত টাকাগুলো যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদের হাতে আসে তাহলে বেড়িবাঁধের কাজ দ্রুত ধরতে পারি। মঠবাড়িয়ার বড়মাছুয়ায় ৪০০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের কাজ ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে জিও ব্যাগ দিয়ে নির্মাণ কাজ চলছে। বাঁধ রক্ষার ২৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা চাহিদাপত্র চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সংবাদ-ডেইলি বাংলাদেশের।
Leave a Reply